![]() |
ডাক্তার মিজানুর রহমান এবং তার পিতা ফজলুর রহমান |
মানবিক ডাক্তার মিজানুর রহমান
SM.RUBEL (HB)
Satpuabd.blogspot.com
1no satpua Union sarishabari Jamalpur villagers natural
![]() |
ডাক্তার মিজানুর রহমান এবং তার পিতা ফজলুর রহমান |
SM.RUBEL (HB)
Satpuabd.blogspot.com
![]() |
ছয় মাসের শিশু আলী আজগর (আঃ) কাল্পনিক ফটো |
বিষাদ সিন্ধুর
এর নবম প্রবাহ
দামেস্ক-রাজপুরী মধ্যে পুরবাসিগণ, দাসদাসীগণ মহা ব্যতিব্যস্ত; সকলেই বিষাদিত। মাবিয়ার-জীবন-সংশয় বাক্রোধ হইয়াছে, চক্ষুতারা বিবর্ণ হইয়া ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে, কথা কহিবার শক্তি নাই। এজিদের জননী নিকটে বসিয়া স্বামীর মুখে শরবৎ দিতেছেন, দাসদাসীগণ দাঁড়াইয়া কাঁদিতেছে, আত্মীয়স্বজনেরা মাবিয়ার দেহ বেষ্টন করিয়া একটু উচ্চস্বপ্নে ঈশ্বরের নাম করিতেছেন। হঠাৎ মাবিয়া একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া "লাএ-লাহা এল্লল্লাহা মহম্মদ রসুলোল্লাহ" এই শব্দ' করিয়া উঠিলেন। সকলে গোলযোগ করিয়া ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে বলিয়া উঠিলেন, "এবার রক্ষা পাইলেন। এবারে 'আল্লা রেহাই দিলেন।” আবার কিঞ্চিৎ বিলম্বে ঐ কয়েকটা কথা ভক্তির সহিত উচ্চারিত হইল। সেবারে আর বিলম্ব হইল না। অমনি আবার ঐ কয়েকটা কথা পুনর্ব্বার উচ্চারণ করিলেন। কেহ আর কিছুই দেখিলেন না। কেবল ওষ্ঠ দুইখানি একটু সঞ্চালিত হইল মাত্র। উদ্ধ' চক্ষু নীচে নামিল। নামিবার সঙ্গে সঙ্গেই
চক্ষের পাতা অতি মৃদু মৃদু ভাবে আসিয়া চক্ষুর তারা ঢাকিয়া ফেলিল। নিশ্বাস বন্ধ হইল। এজিদের জননী মাবিয়ার বক্ষে হস্ত দিয়া দেখিয়াই কাঁদিয়া উঠিলেন। সকলেই মাবিয়ার জন্য কাঁদিতে লাগিলেন। এজিদ অশ্ব হইতে নামিয়া তাড়াতাড়ি আসিয়া দেখিলেন, আবিয়ার চক্ষু 'নিমীলিত, বক্ষঃস্থল অস্পন্দ; একবার মস্তকে, একবার বক্ষে হাত দিয়াই চলিয়া গেলেন। কিন্তু কেহই এজিদের চক্ষে জল দেখিতে পায় নাই। এজিদ পিতার মৃতহে যথারীতি স্নান করাইয়া "কাফন" দ্বারা শাস্ত্রা-হুসারে আপাদমস্তক আবৃত করিয়া মৃতদেহের সদগতি উপাসনা (জানাজা) করাইতে তাবুর (শয়নাসন) শায়ী করাইয়া সাধারণ-সম্মুখে আনয়ন করিলেন। বিনা আহ্বানে শত শত ধাম্মিকপুরুষ আসিয়া জানাজাক্ষেত্রে মাবিয়ার বস্ত্রাবৃত শবদেহের সমীপে ঈশ্বরের আরাধনার নিমিত্ত দণ্ডায়মান হইলেন। সকলেই করুণাময় ভগবানের নিকট দুই হস্ত তুলিয়া মাবিয়ার আত্মার মুক্তির প্রার্থনা করিলেন। পরে নিদ্দিষ্ট স্থানে "দাফন" (মৃত্তিকাপ্রোথিত) করিয়া সকলেই স্বস্ব 'গৃহে চলিয়া গেলেন।
মাবিয়ার জীবনের লীলাখেলা একেবারে মিটিয়া গেল। ঘটনা এবং কার্য্য স্বপ্নবৎ কাহারও কাহারও মনে জাগিতে লাগিল। হাসান-হোসেন মদিনা হইতে দামেস্কের নিকট পর্যন্ত আসিয়া মাবিয়ার মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে আর নগরে প্রবেশ করিলেন না। মাবিয়ার জন্য অনেক দুঃখ প্রকাশ করিয়া পুনর্ব্বার মদিনায় যাত্রা করিলেন। মাবিয়া জগতের চক্ষু হইতে অদৃশ্য হইয়াছেন; রাজসিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া যে স্থানে গিয়াছেন; তথা হইতে আর ফিরিবেন না,' এজিদের মুখও আর দেখিবেন, *না, এজিদকে পাপকার্য্য হইতে বিরত এবং হাসান-হোসেনের প্রতি নিষ্ঠুরা-চরণ নিবারণ করিতেও আর আসিবেন না, এজিদকে ভৎসনাও আর,
করিবেন না। এজিদ মনে মনে এই স্থির সিদ্ধান্ত করিয়া দামেস্ক রাজ-সিংহাসনে উপবেশন করিলেন। রাজস্ফুট শিরে শোভা পাইতে লাগিল। সত্যবাদী, নিরপেক্ষ ও ধার্মিক মহাত্মাগণ, যাঁহারা হজরত মাবিয়ার স্বপক্ষ ছিলেন, তাঁহাদের হৃদয় কাঁপিয়া উঠিল। আমরাও বিষাদ-সিন্ধু তটে আসিলাম। এজিদ এক্ষণে স্বাধীন রাজ্যের রাজা। কখন কাহার ভাগ্যে কি হয়, ইহা ভাবিয়া সকলেই ব্যাকুল। রাজদরবার লোকে লোকারণ্য। পূর্ব্বদিন ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে, সহগের সম্ভ্রান্ত লোক-মাত্রেই দরবারে উপস্থিত হইবেন। অনেকের মনেই অনেক কথা উঠিল। কি করেন রাজ-আজ্ঞা-নিয়মিত সময়ে সকলেই "আম" দরবারে উপস্থিত হইলেন। এজিদও উপযুক্ত বেশভূষায় ভূষিত হইয়া সিংহা-সনোপরি উপবেশন করিলেন। প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান দরবারস্থ সমুদয় সম্ভ্রান্ত মহোদয়গণকে সম্বোধন করিয়া কহিতে লাগিলেন, "আজ আমাদের কি সুখের দিন, আজ আমরা এই দামেস্ক সিংহাসনে নবীনরাজের অধিবেশন দেখিলাম। উপযুক্ত পাত্রেই আজ রাজসিংহাসন সুশোভিত হইয়াছে। সম্ভ্রান্ত মহোদয়গণ! আজ হইতে আপনাদের দুঃখ ঘুচিল। দামেস্ক রাজ্যে আজ হইতে যে সুখসূর্য্যের উদয় হইল, তাহা আর অস্তমিত হইবে না। আপনারা এই নবোদিত, সূর্য্যকে কায়মনে পুনরাজ অভিবাদন করুন!" সভাস্থ সকলেই নতশিরে এজিদকে অভিবাদন করিলেন। মারওয়ান পুনরায় বলিতে লাগিলেন, "মহোদয়গণ! আমার একটা কথা আছে। আজ মহারাজ এজিদ নবীন রাজদণ্ড হস্তে করিয়াছেন, আজই একটা গুরুতর বিচারভার ইহাকে বহন করিতে হইতেছে। আপনাদের সম্মুখেই রাজবিদ্রোহীর বিচার করিবেন এই অভিপ্রায়েই আপনাদের আহ্বান করা হইয়াছে।"
মারওয়ানের পূর্ব্ব আদেশানুসারে প্রহরীরা মোল্লেমকে বন্ধন-দশায় রাজসভায় আনিয়া উপস্থিত করিল। সভাস্থ সকলে মোল্লেমের দুরবস্থা দেখিয়া একেবারে বিস্ময়াপন্ন হইলেন। মাবিয়ার এত বিশ্বাসী প্রিয়
পাত্র, এত সম্মানাষ্পদ, এত স্নেহাস্পদ, সেই মোল্লেমের এই স্বরবস্থা-কি আশ্চর্য্য! আজিও মাবিয়ার দেহ ভূগর্ভে বিলীন হয় নাই, অনেকেই আজ পর্যন্ত শোকবস্ত্র পরিত্যাগ করেন নাই, মাবিয়ার নাম এখনও সকলের জিহ্বাগ্রেই রহিয়াছে; আজ সেই মাবিয়ার প্রিয় বন্ধুর এই দুর্দশা! কি সর্ব্বনাশ! এজিদের অসাধ্য কি আছে? অনেকেই মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন-আর মঙ্গল নাই। দামেস্ক রাজ্যের আর মঙ্গল নাই। কি পাষাণ হৃদয়! উঃ!! এজিং কি পাষাণ হৃদয়!! কাহারও মুখ ফুটিয়া কিছুই বলিবার সাহস হইল না; সকলেই কেবল মনে মনে ঈশ্বরের নাম জপ করিতে লাগিলেন। মোসলেম চিন্তায় ও মনস্তাপে ক্ষীণকায় হইয়াছেন, এজিদ বলিয়াছেন, মাবিয়ার মৃত্যুতেই তাঁহার মুক্তি কিন্তু মাবিয়া আছেন কি না, মোস্লেম তখন তাহাও নিশ্চয় করিতে পারিলেন না। কেহ কোন কথা তাঁহাকে বলিতে পারিবেন না এবং তাঁহার কথাও কেহ জানিতে পারিবেন না, পূর্ব্ব হইতেই এজিদের: এই আজ্ঞা ছিল। সুতরাং মোস্লেমকে কোন কথা বলে কাহার সাধ্য?
নগরের প্রায় সমুদয় ভদ্রলোককে একত্র দেখিয়া মোল্লেম কিছু আশ্বস্ত হইলেন। মনে মনে জানেন, তিনি কোন অপরাধে অপরাধী নহেন। রাজাজ্ঞা প্রতিপালন করিয়াছেন, ইহাতে যদি এজিদ অন্যায়াচরণ করেন, তবে একমাত্র ঈশ্বর ভিন্ন আর কাহাকেও কিছু বলিবেন না, মুক্তিলাভের প্রার্থনাও করিবেন না! মাবিয়ার আজ্ঞাক্রমেই হাসান-হোসেনের নিকট মদিনায় যাইতেছিলেন, ইহাই যদি অপরাধের কার্য্য হয়, আর সেই অপরাধেই যদি প্রাণ যায়, তাহাও স্বীকার, তথাপি চিত্ত বিচলিত করিবেন না, মনে 'মনে এইরূপ স্থির করিয়া ঈশ্বরের প্রতি নির্ভর করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। সভ্যগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক মারওয়ান কহিলেন, "এই ব্যক্তি রাজদ্রোহী, আজ ইহারই বিচার হইবে। .. আমাদের নবদওধর আপনাদের সম্মুখে ইহার নিষ্পত্তি করিয়েন, ইহাই জহার অভিপ্রায়।"
এজিদ বলিলেন, "এই কাসেদ বিশ্বাসী নহে। যাহারা ইহাকে বিশ্বাসী বলিয়া স্থির করিয়াছে, এবং ইহার অনুকূলে যাহারা কিছু বলিবে তাহারাও বিশ্বাসী নহে। আমার বিবেচনায় ইহার স্বপক্ষ লোকমাত্রেই অবিশ্বাসী, রাজবিদ্রোহী।"
সকলের শরীর রোমাঞ্চিত হইল, ভয়ে হৃদয় কাঁপিতে লাগিল, আকণ্ঠ শুকাইয়া গেল। যাহারা মোল্লেমের সম্বন্ধে কিছু বলিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মুখ একেবারে বন্ধ হইয়া গেল।
এজিদ পুনর্ব্বার বলিতে লাগিলেন, "এই মিথ্যাবাদী বিশ্বাসঘাতক, আমার বিবাহ পয়গাম লইয়া জয়নাবের নিকট গিয়াছিল। আমার পয়গাম গোপন করিয়া আমার চিরশত্রু হাসান, যাহার নাম শুনিলে আমার দিগ্বিদিক্ জ্ঞান থাকে না, সেই হাসানের পয়গাম জয়নাবের নিকট বলিয়া, জয়নাবের সহিত তাহার বিবাহ দিয়াছে। আমি নিশ্চয় জানি, আমার পয়গাম জয়নাবের কর্ণগোচর হয় নাই। আমার নাম শুনিলে জয়নাব কখনই হাসানকে 'কবুল' করিত না। হাসানের অবস্থা জয়নাবের অবিদিত কিছুই নাই। কেবল মিথ্যাবাদীর চক্রান্তে জয়নাব-রত্ন শত্রুহস্তে পতিত হইয়াছে। আরও কথা আছে। এই মিথ্যাবাদী। যাহা বলে, তাহা যদি সত্য বিবেচনা করিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলেও ইহার অপরাধ আরও গুরুতর হইয়া দাঁড়ায়। আমার চিরশত্রুর আক্তা প্রতিপালন করিয়া আমারই সর্ব্বনাশ করিয়াছে। হাসানের পয়গাম' জয়নাবের নিকট লইয়া যাইতে আমি ইহাকে নিয়োজিত করি নাই। ইহার অপরাধের শাস্তি হওয়া আবশ্যক। না জানিয়া এই কার্য্য করিয়াছে অহাও বলিতে পারি না। জয়নাব-লাভের জন্য আমি যাহা যাহা করিয়াছি, তাহা কে না জানে? মোস্লেম কি জানে না যে, জয়নাবের জন্য আমি সর্ব্বস্ব পণ করিয়া শেষে জীবন পর্যন্ত বিসর্জন ব্লিতে প্রস্তুত ছিলাম, সেই জয়নাবের বিবাহে আমার পক্ষে উকীল নিযুক্ত হইয়া 'অপরের সঙ্গে বিবাহ স্থির করিয়া আসিল, ইটা অপেক্ষা বিশ্বাসঘাতকতা
আর কি আছে? আর একটা কথা। এই সকল কুকাব্য করিয়াও এই ব্যক্তি ক্ষান্ত হয় নাই। আমারই সর্ব্বনাশের জন্য,- আমাকেই রাজ্য হইতে বঞ্চিত করিবার নিমিত্ত, আমাকেই পথের ভিখার্জী করিবার আশায়, মাবিয়ার পত্র লইয়া হাসানের নিকট মদিনায় যাইতেছিল। অতএব আমার এই আজ্ঞা যে, অবিলম্বেই মোল্লেমের শিরশ্ছেদন করা হউক।” সরোধে কাঁপিতে কাঁপিতে এজিদ পুনরায় বলিতে লাগিলেন, "সে দণ্ড বধ্যভূমিতে হইবে না, অন্য কোন স্থানেও সভাগৃহে আমার সম্মুখেই আমার দণ্ডাজ্ঞা প্রতিপালিত হউ
মারওয়ান বলিলেন, "রাজাজ্ঞা শিরোধাধ্য। কিন্তু প্রফ। সপ্তবিধান রাজনীতির বিরুদ্ধ।"
'এজিদ বলিলেন, "আমার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়। যে ইহার বিরোধী হইবে, তাহারও ঐ শাস্তি। মারওয়ান! সাবধান!"
সকলের চক্ষু যেন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইল। এজিদের মুখের কথা মুখে থাকিতে থাকিতেই অভাগা মোল্লেমের ছিন্ন শির ভূতলে লুষ্ঠিত হইতে লাগিল! জিঞ্জিরাবদ্ধ দেহ শোনিতাক্ত হইয়া সভাতলে পড়িয়া সভ্যগণের মোহ ভঙ্গ করিল! তাঁহারা চাহিয়া দেখিলেন, মোস্লম আর নাই। রক্তমাখা দেহ, মস্তক হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া ধরাতলে গড়াগড়ি যাইতেছে! মোল্লেমের পবিত্র শোণিত-বিন্দুর পরমাণু অংশে দামেস্ক-রাজভবনের পবিত্রতা, সিংহাসনের পবিত্রতা, দরবারের পবিত্রতা, ধৰ্ম্মা-সনের পবিত্রতা, মাবিয়া যাহা বহু কষ্টে সঞ্চয় করিয়াছিলেন; সেই সমস্ত পবিত্রতা আজ মোল্লেমের ঐ শোনিতবিন্দুর প্রতি পরমাণুতে, মিশিয়া বিকট অপবিত্রতার আসন পাতিয়া দিল। মোল্লেমের দেহবিনির্গত রক্তধারে "এজিদ! ইহার শেষ আছে!” এই কথা কয়েকটা প্রথম অঙ্কিত হইয়া রক্তস্রোতৃ সভাতলে বহিয়া চলিল। এজিদ সগর্বে বলিতে লাগিলেন, "অমাত্যগণ! প্রধান প্রধান সৈনিক ও সৈন্যাধ্যক্ষগণ। এবং যজছে মহোদয়গণ। আপনারা সকলেই মনোযোগপূর্ব্বক বিণ করুনস
আমার- আজ্ঞা যে কেহ অমান্য করিবে, যে কেহ তাহার অণুমাত্র অবহেলা করিবে, সেই ব্যক্তি নিশ্চয়ই মোস্লমের ন্যায় শান্তি আমার ধনবল, সৈন্যবল, বাহুবল সকলই আছে, কোন 73/579 অভাব নাই। হাসান-হোসেনের যাহা আছে, তাহা কাহারও অজ্ঞাত নাই। সেই হাসানের এত বড় সাহস! এত বড় স্পর্দ্ধা! ভিখারিণীর পুত্র হইয়া রাজরাণীর পাণিগ্রহণ! যে জয়নাব রাজরাণী হইত, সেই ভিখারিণী পুত্র তাহারই পাণিগ্রহণ করিয়াছে। আমি উহার বিবাহের সাধ মিটাইব। জয়নাবকে লইয়া সুখভোগ করিবার সমুচিত প্রতিফল দিব। কে রক্ষা করিবে? কাহার আশ্রয় গ্রহণ করিবে? এজিদ্ জগতে থাকিতে জয়নাবকে লইয়া সে কখনই সুখী হইতে পারিবে না। এখনও সে আশা আমার অন্তরে আছে, যে আশা একপ্রকার নিরাশ হইয়াছে! -হাসান বাঁচিয়া থাকিতে জয়নাব লাভ হইবার আর সম্ভাবনা নাই! তথাচ সেই মহা আসক্তি-আগুণে এজিদের অন্তর সর্ব্বদা জ্বলিতেছে! যদি আমি মাবিয়ার পুত্র হই, তবে হাসান-হোসেনের বংশ একেবারে নিপাত না করিয়া জগৎ পরিত্যাগ করিব না। শুদ্ধ হাসানের মৃতদেহ দেখিয়াই যে, সে মহাগ্নি নির্ব্বাপিত হইবে, তাহা নহে; হাসানের বংশ মধ্যে সকলের মস্তক দ্বিখণ্ডিত করিয়াই যে এজিং ক্ষান্ত হইবে তাহাও নহে! মোহাম্মদের বংশের একটা প্রাণী বাঁচিয়া থাকিতে এজিদ ক্ষান্ত হইবে না; তাহার মনোবেদনাও মন হইতে বিচ্ছুরিত হইবে না। আমার অভাব কি? কাহারও সাহায্য চাহি না; হিতোপদেশ, অথবা পরামর্শের প্রত্যাশা রাখি না। যাহা করিব, তাহা মনেই থাকিল। তবে এইমাত্র বলি যে হাসান-হোসেনের এবং অহাদের বংশানুবংশ আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের প্রতি এজিদ যে দৌরাত্ম্য-অগ্নি জ্বালাইয়া দিবে, যদি তাহা কখন নিবিয়া যায়, যাইতে পারে, কিন্তু সে তাপ 'রোজকেয়ামত' জগতের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদীয়গণের মনে একই ভাবে জাগরিত থাকিবে। আবার যাহারা হাসান-হোসেনের বেশী ভক্ত, তাহারা আজন্মকাল ছাতি
পিটিয়া 'হায় হাসান! হায় হোসেন!' বলিয়া কাঁদিতে থাকিবে।"
সভ্যগণকে এই সকল কথা বলিয়া এজিদ পুনরায় মারওয়ানকে বলিলেন, "হাসান-হোসেনের নিকট যে পত্র পাঠাইবে, সেই পত্রখানা পাঠ করিয়া ইহাদিগকে একবার শুনাইয়া দাও, ইহাদিগের মধ্যে মোহাম্মদভক্ত অনেক আছেন।"
মারওয়ান পত্র পাঠ করিতে লাগিলেন;-
"হাসান! হোসেন!
তোমরা কি এ পর্যন্ত শুন নাই যে, মহারাজাধিরাজ এজি নামদার মধ্যাহ্নকালীন সূৰ্য্যসম দামেস্কসিংহাসনে বিরাজ করিতেছেন। অধীনস্থ রাজা প্রজা মাত্রেই তাঁহার অধীনতা স্বীকার করিয়া কেহ বা উপঢৌকন প্রেরণ, কেহ বা স্বয়ং আসিয়া অবনতশিরে চির-অধীনতা স্বীকার করিয়াছেন; আপন আপন রাজ্যের নির্দ্ধারিত দেয় করে দামেস্ক রাজ-ভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াছেন। তোমাদের মক্কা-মদিনার খাজনা আজ পর্য্যন্ত না আসিবার কারণ কি? স্বয়ং মহারাজাধিরাজ দামেস্কাধিপতির আম-দরবারে উপস্থিত হইয়া, নতশিরে ন্যূনতা স্বীকারে রাজসিংহাসন চুম্বন 'কর। আর এই পত্র প্রাপ্ত হইয়া এজিদ নামদারের নামে খোৎবা পাঠ করিবে। ইহার অন্যথাচরণ হইলেই রাজবিদ্রোহীর শাস্তি ভোগ করিতে হইবে।
কারবালা এর দশম প্রবাহ
নুরনবী মোহাম্মদের রওজায় অর্থাৎ সমাধি-প্রাঙ্গণে হাসান-হোসেন, সহচর আবদুল্লা ওমর এবং আবদার রহমন একত্র বসিয়া পরামর্শ করিতেছেন। যখন কোন বিপদভার মস্তকে আসিয়া পড়ে, কোনরূপ, গুরু-তর কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে হয়, অথবা কোন অভাবনীয় চিন্তা, সংযুক্তি.
উপাসনার পর আরবি ভাষায় ঈশ্বরের গুণানুবাদের পরে, উপাসনার বর্ণন পরে, স্বজাতীয় রাজার নাম উচ্চারণ করিয়া তাঁহাকে অভিবাদন করা হয়। ভারতীয় মুসলমানগণ পূর্ব্বে দিল্লীর শেষ সম্রাট শাহ আলমের নামে খোৎবা পাঠ করিতেন। কিছু দিন তুরস্কের সুলতান আবদুল হামিদ নামে খোৎবা পাঠ কর। হইত।
উক্ত হইয়াছে, হিজরী ১১ সনের ১১ই রবিয়লআওয়াল সোমবার দিবা ৭ম ঘটিকার সময় ৬৩ বৎসর বয়সে প্রভু মোহাম্মদ পবিত্রভূমি মদিনায়-মানবলীলা সম্বরণ করেন। তাঁহার পিতার নাম আবদুল্লা, মাতার নাম আমেনা খাতুন। প্রভুর দেহত্যাগের পর কোথায় সমাধি হইরে, এই বিষয়ে অনেক বাদানুবাদ হইলে হজরত আবু বক্র এই মীমাংসা করেন যে, পয়গম্বর সাহেব জীবিতাবস্থায় যে স্থানকে প্রিয় মনে করিতেন, সেই স্থানে সমাধি হওয়া আবশ্যক। সকলেই ঐ মতের পোষকতা করায় বিবি আয়েশার ঘরে সমাধি দেওয়া শস্থির হইল। বিবি আয়েসা হজরত আবুবকরের কন্যা এবং হজরত মোহাম্মদের সহধশ্মিণী। সেই সমাধিস্থানকে রওজা কহে। হজরত ওমর প্রথমতঃ কাঁচা ইটের রওজা গাঁথুনি করেন। তৎপরে অলিদ চতুঃসীমাবন্দী করিয়া নক্সাদার 'প্রস্তুত দ্বারা উহা প্রস্তুত করেন। তাহার চতুঃপার্শ্ব প্রাচীরে পরিবেষ্টিত।
করিবার আবশ্যক হইয়া উঠে, হাসান-হোসেন উভয়ে মাতামহের সমাধি প্রাঙ্গনে আসিয়া যুক্তি পরামর্শ এবং কর্তব্য বিষয়ে যত স্থির করিতেন। আজ কিসের মন্ত্রণা? কি বিপদ? বাহ্যিকভাবে, মুখের আকৃতিতে, স্পষ্টই যেন কোন ভয়ানক চিন্তার চিত্র চিত্রিত। কি চিন্তা? পাঠক! ঐ দেখুন সমাধি প্রাঙ্গনের সীমানিদ্দিষ্ট স্থানের নিকটে দেখুন, কে দাঁড়াইয়া আছে?
প্রভু মোহাম্মদের সমাধি প্রাঙ্গনের সীমামধ্যে অন্য কাহারও যাইবার রীতি নাই। দর্শক, আগন্তুক সকলেই চতুষ্পার্শ্বস্থ নিদ্দিষ্ট সীমার বাহিরে থাকিয়া জেয়ারত (ভক্তিভাবে দর্শন। করিবার প্রথা প্রচলিত আছে।
পাঠক! যে লোক দাঁড়াইয়া আছে উহাকে কি কখনও দেখিয়াছেন? একটু স্মরণ করুন, অবশ্যই মনে পড়িবে। এই আগন্তুক দামেস্কের
হিজরী ৫৫০ সালে ইস্পাহান নিবাসী জামালদ্দিন চন্দনকাঠের ঝাজুরিদার রেল দ্বারা রওজার চতুদ্দিক আবদ্ধ করিয়া দেন। সেই সময়ে এবনে আবুওল হাজা শরিফ মিসরের বহুমূল্য শ্বেতবর্ণ বস্ত্র (বস্ত্রের নাম দ্বেবা) দ্বেবায় লোহিতবর্ণ রেসম সূত্রে কোরাণ শরিফের সুরা ইয়াসিন লেখাইয়া 'তদ্দ্বারা ঐ পবিত্র সমাধি আবৃত করেন, সেই সময় হইতে আবরণ প্রথা প্রতি বৎসর প্রচলিত হইয়াছে। যিনি মিসরের রাজসিংহাসনে উপবেশন করেন তিনিই বহুমূল্য নূতন বস্ত্র দ্বারা প্রতি বৎসর ঐ সমাধি মন্দির আবৃত করিয়া থাকেন। বিনা-বাক্যব্যয়ে সেই প্রথা আজ পর্য্যন্ত চলিয়া আসিতেছে। ৬৭৮ হিজরীতে কালা আয়েসালেহী নামক একব্যক্তি মদিনার মসজিদের ছাদ হইতে উচ্চ সবুজ রঙ্গের "কোব্বা" (চুড়া) মন্দিরোপরি স্থাপন করিয়াছেন। সেই সুরঞ্জিত উচ্চ চূড়া আজি পর্যন্ত 'অক্ষয় ভাবে রহিয়াছে। হিজরী (১০০০) এক হাজার সালে সুলতান সোলেমান খাঁ রুমী রওজা শরিফের প্রাঙ্গন শ্বেতবর্ণ প্রস্তর দ্বারা মণ্ডিত করাইয়াছেন। ওমর বেনে আবদুল আজিজের পর রওজা 'প্রাঙ্গনের মধ্যে সাধারণ প্রবেশ নিষেধ হইয়াছে। যাত্রীরা চতুষ্পার্শ্বস্থ রেলের বাহিরে থাকিয়া দর্শন করে। চতুষ্পার্শ্বস্থ রেল বস্ত্রাবরণে সদা সর্ব্বদা আবৃত থাঙ্গে।
কাসেদ। আর হাসানের হস্তে ঐ যে কাগজ দেখিতেছেন ঐখানি সেই পত্র যাহা দামেস্কের রাজদরবারে মারওয়ানের মুখে শুনিয়াছিলেন। ওমর বলিলেন "কালে আরও কতই হইবে! এজিদ মাবিয়ার পুত্র। 'যে মাবিয়া' নূরনবী হজরত মোহাম্মদের প্রধান ভক্ত ছিলেন, দেহ মন প্রাণ সকলি আপনাদের মাতামহের চরণে সমর্পণ করিয়াছিলেন, আজ তাঁহারই পুত্র মক্কা-মদিনার খাজনা চাহিতেছে, এজিদের নামে খোৎবা পাঠ করিতে লিখিয়াছে। কি আশ্চর্য্য! কালে অরও কতই হইবে, তাহা কে বলিতে পারে?"
আব্দুর রহমান বলিলেন, "এজিস্ পাগল হইয়াছে নিশ্চয়ই পাগল! পাগল ভিন্ন আর কি বলিব? এই অসীম জগতে এমন কেহই ১79 নাই যে আমরা বাঁচিয়া থাকিতে মক্কা-মদিনার কর চাহিতে পারে। এজিদ যে মুখে এই সকল কথা বলিয়াছে, সেই মুখের শাস্তি বিশেষ করিয়া দেওয়া উচিত। ইহার পরামর্শ আর কি? আমার মতে কাসেদকে পত্রসহ অপমান করিয়া তাড়াইয়া দেওয়াই সমুচিত বিধি। ঐ পাপপূর্ণ-কথা-অঙ্কিত পত্র পুণ্য-ভূমি মদিনার থাকিবার উপযুক্ত নহে।।
ওমর বলিলেন, "ভাই! তোমার কথ। আমি অবহেলা করিতে পারি না। দুরাত্মার কি সাহস! কোন মুখে এমন কথা উচ্চারণ করিল। কি সাহসে পত্র লিখিয়া কাসেদের হস্তে দিয়া পাঠাইল। উহার নিকট কি কোন ভাল লোক নাই? এক মাবিয়ার সঙ্গে দামের হইতে কি সকলেই চলিয়া গিয়াছে?"
আব্দর রহমান বলিলেন, "পশুর নিকটে কি মানুষের আদর আছে? হামান, নাম মাত্র মন্ত্রী। হামানের কোন কথাই এজিস্ শুনিতে চায় না। মারওয়ানই আজকাল দামেস্কের প্রধান মন্ত্রী, সভঙ্গসদ, প্রধান মন্ত্রদাতা, এজিদের প্রধান গুরু; বুদ্ধি, বল, যাহা কিছু সকলই মারওয়ান। এই ত লোকের মুখে শুনিতে পাই।”
হাসান বলিলেন, "এ যে মারওয়ানের কার্য্য, তাহা আমি আগেইজানিতে পারিয়াছি। তাহা যাহাই হউক, পত্র ফিরাইয়া দেওয়াই আমার বিবেচনা।"
হজরত এমাম হাসানের কনিষ্ঠ ভ্রাতা হজরত হোসেন একটু রোষ-ভাবে বলিতে লাগিলেন, "আপনারা যাহাই বলুন, আর যাহাই বিবেচনা করুন, পত্রখানা শুদ্ধ ফেরত দেওয়া আমার ইচ্ছা নহে। কজ্জাৎ বাঁদীবাচ্চা কি ভাবিয়াছে? ওর এতদূর স্পর্ছা যে আমাদিগকে, উহার অধীনতা স্বীকার করিতে পত্র লিখে? আমরা উহাকে শাহান্ শাহা (সম্রাট) বলিয়া মান্য করিব? যাহাদের পিতার নামে দামেস্করাজ্য কাঁপিয়া উঠিয়াছে, তাহাদের আজ এতদূর অপমান! যাঁহার পদভয়ে। দামেস্করাজ্য দলিত হইয়া বক্ষে সিংহাসন পাতিয়া বসিবার স্থান দিয়াছে, নিয়মিতরূপে কর যোগাইয়াছে, আমরা তাঁহারই সন্তান, তাঁহারই উত্তরাধিকারী, আমরাই দামেস্কের রাজা, দামেস্কের সিংহাসন আমাদেরই বসিবার স্থান। কমজাৎ কাফের সেই সিংহাসনে বসিয়া আমাদেরই নিকট মক্কামদিনার খাজনা চাহিয়াছে, ইহা কি সহ্য হয়?"
হাসান বলিলেন, "ভ্রাতঃ! একটু বিবেচনা করিয়া কাৰ্য্য করাই ভাল। আমরা অগ্রে কিছুই বলিব না, এজিদ যাহা লিখিয়াছেন, তাহার কোন উত্তরও করিব না! দেখি কোন্ পথে যায়, কি উপায় অবলম্বন করে!"
আব্দর রহমান, বলিলেন, "ভ্রাতঃ! আপনার কথা যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু বিষধরসর্প যখন ফণা উঠাইয়া দাঁড়ায়, অমনি তাহার মাথা চূর্ণ করা আবশ্যক; নতুবা সময় পাইলে নিশ্চয়ই দংশন করে। এজিদ নিশ্চয়ই কালসর্প।' উহার মস্তক প্রথম উত্থানেই চূর্ণ করিয়া ফেলা বিধেয়, বিশেষতঃ আপনার প্রতিই উহার বেশী লক্ষ্য।"
গম্ভীরভাবে হাসান কহিলেন, "আর একবার পরীক্ষা করিয়া দোখ; এখনও সৌং সম্ভয় হয় নাই। এবারে নিরুত্তরই সন্ধুত্তর মনে করিয়াছি।"
ছোপের বলিলেন, "আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য্য। কিন্তু একেবারে মোতর হইয়া থাকা আমার বিলেচনায় যুক্তিযুক্ত নহে। আপনার
আদেশ লঙ্ঘন করিব না। আমি কাসেদকে বিদায় করিতেছি। পত্রখানা আমার হস্তে প্রদান করুন।"
হোসেনের হন্তে পত্র দিয়া হাসান রওজা হইতে নিকটস্থ উপাসনা মন্দিরাভিমুখে চলিয়া গেলেন। কাসেকে সম্বোধন কুরিয়া হোসেন বলিতে লাগিলেন, "কাসেদ্! আজ আমি রাজনীতির মস্তকে শত পদাঘাত করিতাম, আজ আমি চিরপদ্ধতি প্রাচীন নীতি উপেক্ষা করিয়া এ পত্রের সমুচিত উত্তর বিধান করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াও ভ্রাতৃ-আজ্ঞা লঙ্ঘন মহাপাপ জানিয়া তোমার প্রাণ তোমাকে অর্পণ করিলাম। কমজাৎ এজিদ যে পত্র' দিয়া তোমাকে মদিনায় পাঠাইয়াছে, ইহার প্রতি অক্ষরে শত শত বার পাদুকাঘাত করিলেও আমার ক্রোধের অণুমাত্র উপশম হয় না। কি করি, ধৰ্ম্মগ্রন্থে লিখিত ভাষার অক্ষর ইহাতে সন্নিবেশিত আছে মনে করিয়াই তাহা 'করিলাম না। ফিরিয়া গিয়া সেই কম্পাৎকে এই সকল কথা অবিকল বলিও এবং দেখাইও যে, তাহার পত্রের উত্তর এই।"
এই কথাগুলি বলিয়া পত্রখানি শতখণ্ড করিয়া কাসেদের হস্তে দিয়া হোসেন আবার কহিলেন, "যাও! এই উপস্থিত সন্ধ্যাতেই তোমার পাইলে?" হোসেন এই বলিয়া ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া যাও যে, আজ জীবনের শেষ সন্ধ্যা হইতে মুক্তি কাসেদের নিকট 'হইতে ফিরিয়। আসিলেন। এদিকে সন্ধ্যাকালীন উপাসনা সময়ে আহ্বানসূচক সুমধুর ধ্বনি (আজান) ঘোষিত হইল.; সকলেই উপাসনা 'করিতে গমন করিলেন। কাসেদের প্রত্যাগমনের পূর্ব্বেই এজিদ সমরসজ্জায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। সৈন্যগণের পরিচ্ছদ, অস্ত্রশস্ত্রের পারিপাট্য, আহারীয় দ্রব্যের সংগ্রহ, পানীয় জলের সুযোগ, দ্রব্যজাত বহনোপযোগী বাহন ও বস্ত্রবাস প্রভৃতি যাহা যাহা অবশ্যক, তৎসমস্তই প্রস্তুত করিয়াছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই জানিয়াছিলেন যে পত্র পাইয়া হাসান-হোসেন একেবারে জ্বলিয়া উঠিবে; কাসেদের প্রাণ লইয়া দামেস্কে ফিরিয়া আসা সন্দেহ
বিবেচনা করিয়া গুপ্ত-চর নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ভাবিয়াছিলে নিশ্চয়ই যুদ্ধ হইবে। কেবল সংবাদ প্রাপ্তির অপেক্ষায় ছিলেন মাত্র। এক দিন আপন সৈন্য-সামন্তগণকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়া প্রথমতঃ অশ্বারোহী সৈন্যদিগের যুদ্ধকৌশল ও অস্ত্রচালনা দেখিয়া পরে পদাতিক সৈন্যের ব্যূহনির্মাণের নৈপুণ্য, আত্মরক্ষা করিয়া বিপক্ষের প্রতি অস্ত্র-চালনের সুকৌশল এবং সমরপ্রাঙ্গনে পদচালনার চাতুর্য্য দেখিয়া এজিদ মহানন্দে বলিতে লাগিলেন, "আমার এই শিক্ষিত সৈন্তগণের অস্ত্রের সম্মুখে দাঁড়ায় এমন বীরপুরুষ আরব দেশে কে আছে? এমন সুশিক্ষিত সাহসী সৈন্ত কাহার আছে? ইহাদের নিশ্চিত ব্যূহ ভেদ করিয়া যুদ্ধ জয়ী হওয়া কাহার সাধ্য? হাসান ত দূরের কথা, তাহাদের পিতা যে অত বড় যোদ্ধা ছিল, সেই আলীও যদি কবর হইতে উঠিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের সম্মুখীন হয়, তাহা হইলেও তাহাদের পরাজয় ভিন্ন জয়ের আশা নাই।"
এজিদ এইবার আত্মগৌরব ও আত্মপ্রশংসায় মত্ত ছিলেন, এমন সময়ে মদিনা হইতে কাসেদ আসিয়া, সমুচিত অভিবাদনপূর্ব্বক এজিদের হস্তে প্রত্যুত্তর পত্র দিয়া, হোসেন যাহা বলিয়াছিলেন, অবিকল বলিল।
এজিদ ক্রোধে অধীর, হইয়া কিঞ্চিৎ উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন,-"সৈন্যগণ! তোমরা আমার দক্ষিণ বাহু, তোমরাই আমার একমাত্র ভরসা। আমি তোমাদিগকে যথাযোগ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করিয়াছি, পূর্ব্ব হইতেই বেতন সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছি, যে যেমন উপযুক্ত, তাহাকে সেই প্রকার সম্মানে সম্মানিত করিয়াছি। এতদিন তোমাদিগকে যত্ন করিয়া প্রতিপালন করিয়াছি। আর্জ আমার এই আদেশ যে, এই সজ্জিত বেশ আর পরিত্যাগ করিও না, হস্তস্থিত অসিও আর কোয়েও রাখিও না। ধনুর্দ্ধরগণ! তোমরা আর তৃণীরের দিকে লক্ষ্য করিও না। অদিনা সম্মুখ ভিন্ন আর পশ্চাৎ করিও না। এই দেশেই এই যাত্রাই শুভযাত্রা করিয়া হাসান-হোসেন-বধে এখনই যাত্রা কর। যত শীঘ্র পার
প্রথমে হাসানের মস্তক আনিয়া আমাকে দেখাও। লক্ষ টাকা পুরস্কার! আমি নিশ্চয়ই জানি, তোমরা মনোযোগী হইয়া একটু চেষ্টা করিলেই উভয়ের মস্তক তোমাদের হস্তেই দামেস্কে আনীত হইবে। আমার মন ডাকিয়া বলিতেছে, তোমাদের তরবারি সেই উভয় ভ্রাতার শোণিত-পানে লোলুপ রহিয়াছে।”
সৈন্যগণকে ইহা বলিয়া মন্ত্রীকে বলিতে লাগিলেন, "ভাই মারওয়ান! তুমি আমার বাল্য-সহচর। আজ তোমাকেই আঁমার সৈনাপত্যের কারণ, হাসান-হোসেনের বধসাধন-তজ্জন্য মদিনায় পাঠাইতেছি। যদি এজিদের মান রক্ষা করিতে চাও, যদি এজিদের অন্তরাগ্নি নির্ব্বাণ করিতে চাও, যদি এজিদের মনের দুঃখ দূর করিতে চাও, যদি এজিদের জয়নাবলাভের আশাতরী বিষাদ-সিন্ধু হইতে উদ্ধার করিতে চাও, তবে এখনই অগ্রসর হও, আর পশ্চাতে ফিরিও না। পূর্ব্ব হইতেই সকলই আমি সমুচিতরূপে আয়োজন করিয়া রাখিয়াছি, আজ এজিদের প্রাণ তোমারই হস্তে সমর্পিত হইল। যে দিন হাসান-হোসেনের মৃত্যুসংবাদ এই নগরে আসিবে, সেই দিন জানিও যে এজিং পুনর্জীবিত হইয়া দামেস্করাজ-ভাণ্ডারের অবারিত দ্বার খুলিয়া, বসিবে। সংখ্যা করিয় কি হস্তে তুলিয়া দিবে না, সকলেই যথেচ্ছরূপে যথেচ্ছ বস্তু গ্রহণ করিবে। কাহারও আদেশের অপেক্ষায় থাকিবে না। মারওয়ান! সকল কার্য্যে ও সকল কথাতেই 'যদি' নামে একটি শব্দ আছে। জগতে আমি যদি কিছু ভয় করি, তবে ঐ 'যদি' শব্দেই সময়ে সময়ে আমার প্রাণ কাঁপিস্থা উঠে। যদি যুদ্ধে পরাস্ত হও, নিরুৎসাহ হইও না, হাসান-হোসেনে প্রধসঙ্কল্প হইতে কখনই নিরাশ হইও না, দামেস্কেও ফিরিও না। মদিনায় নিকটবর্তী কোন স্থানে থাকিয়া তোমার চিরবন্ধুর চিরশত্রুর প্রাণসংহার করিতে যত্ন করিও। ছলে হউক, বলে হউক, কৌশলে হউক, কিম্বা অর্থেই হউক, প্রথমে হাসানের জীবন-প্রদীপ তোমার হস্তে নির্ব্বাণ হওয়ার শুভ সংবাদ আমি শুনিতে চাই। হাসানের প্রাণবিয়োগজনিতজয়নাবের পুনঃবৈধব্যব্রত আমি সানন্দ চিত্তে শুনিতে চাই। আর কি বলিব? তোমার অজানা আর কি আছে?"
সৈন্তদিগকে সম্বোধন করিয়া মারওয়ান বলিতে লাগিলেন, "বীরগণ! তোমাদের প্রভুর আজ্ঞা সকলেই স্বকর্ণে শুনিলে। আমার আর বলিবার কিছু নাই। ভ্রাতৃগণ! এখন একবার দামেস্ক-রাজের জয়নাদে আকাশ ফাটাইয়া, জগৎ কাঁপাইয়া, মনের আনন্দে, দ্বিগুণ উৎসাহে এখনই যাত্রা কর। মারওয়ান ছায়ার কায় তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবে।"
সৈন্যগণ বীরদর্পে ঘোর নাদে বলিয়া উঠিল, "জয় মহারাজ এজিদের জয়! জয় মহারাজ দামেস্করাজের জয় !!"
কাড়া, নাকাড়া, ডঙ্কা,, গুড় গুড় শব্দে বাজিয়া যেন বিনা মেঘে মেঘগর্জনের ন্যায় অবিরত ধ্বনিত হইতে লাগিল। আজ অকস্মাৎ বিনা মেঘে হৃদয়কম্পন বজ্রধ্বনির ন্যায় ভীমনাদ শ্রবণে নগরবাসীরা ভয়াকুল চিত্তে বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, গগনে মেঘের সঞ্চারমাত্র নাই, কিন্তু রাজপথ প্রস্তর-রেণু ও বালুকাকণাতে অন্ধকার; অসংখ্য সেনা রণবাদ্যে মাতিয়া শুভসূচক বিজয় নিশান উড়াইয়া মদিনাভিমুখে চলিয়াছে। নগরবাসিগণর মধ্যে কাহারও মনে ব্যথা লাগিল, কাহারও চক্ষু জলে পূরিল, কেহ কেহ এজিদের জয়রব করিয়া আনন্দানুভব করিল
এজিদ মহোৎসাহে নগরের অন্তঃসীমা পর্যন্ত সৈন্যদিগের সঙ্গে সঙ্গে যাইয়া, মারওয়ান, সৈন্যগণ ও সৈন্যাধ্যক্ষ্য অলিদের নিকট বিদায় হইয়া নগরে ফিরিয়া আসিলেন
SM.RUBEL (HB)
![]() |
শুয়াকৈর ব্রিজ |
যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিকট জোর দাবি এবং আকুল আবেদন জানাচ্ছি শীঘ্রই এই লক্ষাধিক মানুষদের কষ্টের দিকে তাকিয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ রইলো
তার সাথে এলাকাবাসীর সহ সকলকে আওয়াজ উঠান যেখানে যেতে হয় সেখানে যান সবাই জোটবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় করুন,,
ইনশাল্লাহ আল্লাহ আপনাদেরকে এই দুর্ভোগের মধ্য থেকে পরিত্রান দিক।
SM.RUBEL (HB)
Satpuabd.blogspot.com
![]() |
গ্রামের সার গরু |
মুসলিম ধর্মালম্বীদের প্রায় মানুষ হালাল প্রাণী হাদিস কোরআন থেকে জানে উট দুম্বা গরু ছাগল ভেড়া ইত্যাদি উপরিউক্ত পশু গুলো কোরবানির উপযুক্ত পশু তবে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু অপছন্দনীয় অঙ্গের কথা ব্যক্ত করেছেন। এবং কুরআনে উল্লেখ্য আছে,যা আমাদের জন্য খাওয়া মোটেও ভালো না তা হল
০১/পুরুষ পশুর প্রজনন অঙ্গ
০২/অণ্ডকোষ
০৩/মাদি প্রাণীর প্রজনন অঙ্গ
০৪/মাংস গ্রন্থি (টিউমারের মতো)
০৫/মূত্রথলি
০৬/পিত্ত
উপরিউক্ত অঙ্গ ব্যতীত হালাল পশুর বাকি সবকিছু খাওয়া যাবে
দলিল সূরা আল আরাফ,,
১৫৭ বাদায়িউস সানায়ি
প্রতিবেদন, শেখ মোঃ রুবেল হাসান (বাবু)
১নং সাতপোয়া ইউনিয়ন ০৪নং ওয়ার্ড আদ্রা
বড় আদ্রা উত্তর পাড়া(টাউন পাড়া)নিবাসী মোঃ জহুরুল ইসলাম এর মেজো(২য়) ছেলে মোঃ নবীর মিয়া(২৪) আজ সকাল ৬.৩০ মিনিটে সেজ মোটর থেকে পানি উত্তোলন করতে গিয়ে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়ে ইন্তেকাল ফরমায়েছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)
মরহুম এর জানাযা নামাজ আজ ২০/০৫/২০২৫ তারিখ বিকাল ০৩ ঘটিকার সময় তাহার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হইবে।
হে অল্প দিন হলো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং প্রায় চার মাসের একটি পুত্র সন্তান আছে আল্লাহ তাকে নেক হায়াৎ দান করুক,,
পরিবারকে সুখ সহিবার ধৈর্য দান করুন
আল্লাহ মরহুমের জীবন জিন্দেগির পাপগুলো মাফ করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন (আমীন)
জানাগেছে মো: শাহজাহান দীর্ঘ ৩০ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সি এন্ড এফ এর ব্যবসা জড়িত। তিনি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বর্তমানে সিন্থিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী। এছাড়া ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন একটি অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী সংগঠন। অথচ কিছু কতিপয় অসাধু লোক তাকে আওয়ামী লীগের নেতা ও যুগ্ম সম্পাদক বলে অপপ্রচার চালায়। শুধু তাই নয় অপপ্রচারকারীরা এই পদটি ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে।সর্বশেষ আশুলিয়া থানায় তাকে আওয়ামী লীগ নেতা বলে একটি মামলা আসামি করা হয়। সেখানে তাকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বলে অপপ্রচার চালানো হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোঃ শাজাহান বলেন আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ। আমাদের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তিনি আরো দাবি করেন আমি যদি আওয়ামী লীগ করি তাহলে আওয়ামী লীগ কেন আমার নামে ২০২২ সালে বিএনপি বলে থানা মামলা করে।
যুগে যুগে যারা ইতিহাস তৈরি করেছে যাদেরকে আমরা মনে রাখি,তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রাম করে সুনাম অর্জন করেছে।
যদিও সুনাম বয়ে চলে তাদের অবর্তমানে।
বাস্তব সঙ্গী হয়ে তেমনি পরিশ্রমী সংগ্রামী একজন, যিনি অন্যদের মধ্যে বড় হয়ে উঠেও নিজেকে অতি ছোট হয়ে জীবন যাপন করে। যার প্রতিটা পদক্ষেপে শারীরিক এবং মানসিক আর্থিক সহ চাপ নিয়ে জীবনের পথ অতিক্রম করে!! নিজের সাথে নিজেই সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা! বলছিলাম জলছাপ এবং প্রায় ২৫ টি বই এর লেখকঃ-
আমাদের জামালপুর জেলা মেলান্দহ থানার অন্তর্ভুক্ত টনকী বাজার গোবিন্দী গ্রামে
পিতাঃ মজিবর রহমান জুলু
মাতাঃ জহুরা বেগম বানেছার কুল আলোকিত করে পিতার সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে
কবি মনিরুজ্জামান বাদল আবির্ভাব/ভূমিষ্ঠ/ জন্মগ্রহণ করেন.
বই মেলায় ২০২৪ সালে প্রকাশিত জলছাপ বইটি পেতে ৬৮৬ নং চলে আসুন
(ভুল মার্জনীয়)
ডাক্তার মিজানুর রহমান এবং তার পিতা ফজলুর রহমান মানবিক ডাক্তার মিজানুর রহমান --------------------------------------------- তিনি ইচ্ছা করলেই ...